মঞ্জুরে খোদা টরিক : জান্নাতুন নাঈম প্রীতির ‘জন্ম ও যোনীর ইতিহাস’ বইটি যখন রকমারি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তখন প্রীতি আমাকে বিষয়টি নিয়ে ইনবক্স করেছিলো। সেটা জেনে খুব আশ্চর্য হইনি। কারণ সে ঘটনা নতুন কিছু ছিলো না। এগুলো পুরনো কাহিনি। অভিজিৎ খুন হওয়ার পর তার বইও তারা সরিয়ে নিয়েছে, বেচাবিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু অভিজিৎ নয়, ফায়েজ আহমদ তৈয়ব, জিয়া হাসান, ফাহামসহ আরও অনেকের ক্ষেত্রে তারা এ কাজ করেছে। প্রতিবছর বইমেলা শুরুর আগেই কোন স্টল বন্ধ থাকবে, কার বই বিক্রি হবেÑ তা ঠিক করা হয়। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকেলে এগুলো হতে পারে না। 

তখনই বুঝতে পেরেছি, প্রীতির বই নিয়ে আরো কাহিনি বাকি আছে। বাংলা একাডেমি বইমেলা থেকে তার বই তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ষোলোকলা পূর্ণ করলো। ফেসবুকের কিছু ভালো-মন্দ লেখালেখি-কথাবার্তা ছাড়া, এর তেমন কোনো প্রতিবাদ হবে না। এখন লেখক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কমই কথা হয়। বরং নিজ দেশে তাঁদের বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকে অনেক আগে দেশান্তর হয়েছে, এখন যার সুযোগ আছে সেই হচ্ছে। 

প্রীতির বইটি টানা পড়া না হলেও মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছি। বই সংক্রান্ত প্রীতি ও অন্যান্যদের পোস্ট থেকে জেনেছি, এটা একটা আত্মজীবনীমুলক বই। আত্মজীবনী মানে খুব ভারী বয়সে লেখা কোনো বই, কিন্তু প্রীতির ক্ষেত্রে বিষয়টা ব্যতিক্রম। এই পুস্তকের অনেক বিষয় ও ব্যক্তি চরিত্রের আলাপ আমার শোভন ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, অত্যন্ত আপত্তিকর মনে হয়েছে। আত্মজীবনী লেখার কাজটা কোনো সহজ ও সাধারণ বিষয় নয়।

লেখকের সব বিষয়ের সঙ্গে একমত হতে হবে বিষয়টা এমন নয়। অবশ্যই তা নিয়ে আলাপ হবে। সে ভার পাঠকের উপর থাকুক, শাসকের হাতে নয়। কিন্তু লেখার স্বাধীনতার পক্ষে আপনাকে থাকতে হবে। যেকোনো স্বাধীনতার সংকচোন আপনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অন্যের বলে তাকে এড়িয়ে গেলে একদিন আপনিও আক্রান্ত হবেন। প্রতিবাদ সে জন্যই জরুরি। 

আত্মজীবনী প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, বাঙালির আত্মজীবনী হলো শয়তানের হাতে লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী। প্রীতির মত হচ্ছে, ‘আমি ফেরেশতা না, আমার সকল কামনাবাসনা নিয়ে আমি নারী ও মানুষ। আমার বইয়ের প্রতিটি লাইন আপনাদের সকল অনুভূতির পর্দা ছিঁড়ে দেওয়ার স্পর্ধা দেখাবে। প্রিয় সমাজ, প্রিয় সুবিধাভোগী ছদ্মবেশী, জেনে রাখোÑ তোমাকে আমার নাম লিখে রাখতে হবে সেইখানে যেখানে আমার নাম লিখলে তোমার আমাকে প্রতিদিন অস্বীকার করতে হবে’! 

প্রীতি সরকারবিরোধী কেউ নয়। সে, তার পরিবার এই ঘরনারই মানুষ। কিন্তু তাকেও সরকারের সামান্য সমালোচনায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দেশান্তর হতে হয়েছে। ওর চমৎকার লেখার গুণের প্রশংসা করি। খুব অল্প বয়সে ও নিজেকে অনেক দূরে নিয়েছে। মেলায় তার প্রকাশনা নিষিদ্ধ মানে কর্তৃপক্ষ আরেকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করলো। লেখক ও গবেষক